শিরোনাম
Passenger Voice | ০৩:১৫ পিএম, ২০২৩-০৬-২২
বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু যদি প্ল্যানমেকার হয়ে থাকেন, মাস্টারমাইন্ড অন্য কেউ। প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ উঠে আসছে একটিই নাম, সেটি বকশীগঞ্জের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের।
গত ১৪ জুন হামলার শিকার নাদিমের মৃত্যু হয় ১৫ জুন দুপুরে। গত ১৭ জুন তার স্ত্রী মনিরা বেগম চেয়ারম্যান বাবুকে প্রধান করে ২২ জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার দ্বিতীয় আসামি বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাবুসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। কিন্তু এখনও ‘মামলামুক্ত’ শাহিনা।
কেন, কী কারণে শাহিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি, সেটি অনেক বড় প্রশ্ন। কিন্তু তিনি কেন নাদিম হত্যার মাস্টারমাইন্ড তা জানা গেছে নাদিমের স্বজন ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের কাছ থেকে। উল্লেখ্য, স্থানীয় অনেক বাসিন্দা শাহিনার ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। অনেকে আবার অকপটে এ ঘটনায় তার জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন।
তারা দাবি করছেন, নাদিমের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিই ঘটিয়েছেন শাহিনা বেগম। কারণ, তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন নাদিম। সে সংবাদের পর গত এপ্রিল তার ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় নাদিম অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগে ছিল শাহিনার নাম।
নিহতের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাতও তার বাবার হত্যাকারী হিসেবে শাহিনার নাম বলছেন। তিনি বলেন, শাহিনা বেগমের নির্দেশে আমার বাবার ওপর হামলা করে বাবু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
নাদিমের ওপর শাহিনার ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হিসেবে জান্নাত বলেন, উনি রাজাকারের মেয়ে। তাকে ৭১ টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের পর মধ্য বাজারে আমার বাবার ওপরে হামলা হয়। এতে তো বোঝাই যে কে কেন হামলা করিয়েছে। ওই হামলার পর বিচার পাইনি, নিরাপত্তা পাইনি। আগের ঘটনায় যথাযথভাবে বিচার হলে বাবাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না।
জান্নাত সরাসরি শাহিনার নাম বললেও তার ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন সেটি না করে বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে যাচ্ছি এ হত্যাকাণ্ডের একজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা তার নাম বলতে পারছি না। পুলিশের এসব অনুসন্ধান করা দরকার।
মেয়ে সরাসরি, ছেলে ইঙ্গিত দিলেও শাহিনার ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। তার ব্যাপারে একটি কথা না বললেও মনিরা স্বামী হত্যার বিচার চান। ঘটনার নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শাহিনা-নাদিম দ্বন্দ্ব শুরু হয় গত এপ্রিলে। যার দরুন নাদিম মার খান গত ১১ এপ্রিল। এ সময় গুরুতর আহত হন তিনি। মামলা করেন শাহিনা বেগম-স্বপন মণ্ডল-খন্দকার শামীমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, বকশিগঞ্জ শহর থেকে চেয়ারম্যান বাবুর সাধুরপাড়া ইউনিয়নের দূরত্ব অনেক। তাই কোনো শেল্টার ছাড়াই নাদিমের হত্যাকাণ্ড হয়নি , সে কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। অন্তত কাউকে তার বাড়ির কাছাকাছি এভাবে রাস্তায়, সবার সামনে মেরে ফেলত না। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহিনা বেগমেই শেল্টার দেন। তা ছাড়া নিজে উপস্থিত থেকে নাদিমকে খুন করানো- এত সাহস বাবু পাবেন না।
এ হত্যা মিশনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁতীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়িত। তারা মূলত তাঁতীলীগের বকশিগঞ্জ উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক রাকিবিল্লাহ রাকিবের ক্যাডার বাহিনী। এই রাকিবিল্লাহকে পদন্নোতি দিয়ে নিজের হাতগুলোর একটি করেছেন শাহিনা। দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদ। স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য রাকিবিল্লাহকে নিজের কাছে টানেন শাহিনা।
উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, শাহিনা যা বলেন, রাকিব তাই করেন। এর বাইরে তার কোনো নড়চড় লক্ষ্য করা যায় না।
নাদিমের ওপর হামলা, তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাকিবিল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ আসামি। কিন্তু তাকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। নাদিমের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, রাকিবিল্লাহর গ্রেপ্তার না হওয়া ও তার জবানবন্দি না পাওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন মাস্টারমাইন্ড শাহিনা।
সাংবাদিক হত্যার ঘটনার পেছনে তার জড়িত থাকার আরও একটি বিষয়কে ‘ক্লু’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, এপ্রিলে যখন নাদিমের ওপর হামলা করা হয়, তখন শাহিনা ছিলেন ঢাকায়। গত ১৪ জুন হামলার ঘটনার সময়ও তিনি ঢাকা অবস্থান করছিলেন। তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেও শাহিনা বিভিন্ন খেল খেলেন। যার মধ্যে অন্যতম ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর একটি ডাকাতির ঘটনা। এদিন দিবাগত রাতে শহরের নয়াপাড়ায় ডাকাতি হয়। এ সময়টিতেও শাহিনা ছিলেন ঢাকা। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত স্থানীয় নেতাকর্মীদের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের এ নেত্রী।
জানা গেছে, ডাকাতির ঘটনায় বকশীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুমান তালুকদারসহ এ মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা আটকও হন। স্থানীয়রা বলছেন, যখনই এলাকায় কোনো বড় ঘটনা ঘটে, তখনই ঢাকা অবস্থান করেন শাহিনা বেগম। ফলে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ থাকে না। বা তিনি রাখতে দেন না।
স্থানীয় সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ দাবি করেছেন। তারা বলছেন, বড় কোনো ঘটনার আগে ঢাকা চলে যান শাহিনা। সেখান থেকে ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে অপকর্ম ঘটান। দুটি বাহিনী পরিচালনা করেন শাহিনা। দুটির মধ্যে একটি রাকিবিল্লাহর; অপরটি ইসমাইল হোসেন স্বপন মণ্ডল ও খন্দকার শামীমের সমন্বয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, এ দুজন আবার বকশীগঞ্জের উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
এত ক্লু থাকার পরও শাহিনার নাম মামলায় নেই বা মনিরা দেননি- বিষয়টি নিয়ে মানুষের মুখে মুখে প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে। কেন মনিরা তার স্বামী হত্যায় শাহিনার নাম দিচ্ছেন কিনা বা তিনি ভয় পাচ্ছেন কিনা- এটি নিয়েও উত্তর খোঁজেন অনেকেই।
জানা গেছে, ১৪ জুন রাতের ঘটনা; নাদিমের মৃত্যু ও দাফন শেষ হলে গত ১৬ জুন দিবাগত রাতে মনিরাকে ফোন দেন শাহিনা। ঢাকা থেকেই তিনি মনিরাকে ‘ম্যানেজের’ চেষ্টা করেন। এক নম্বর আসামি হতে পারেন ভেবে তিনি মনিরাকে বোঝান, নাদিমের সঙ্গে তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এদিন মনিরাকে মানাতে না পেরে শাহিনা তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন গত ১৭ জুন সকালে। এ সময় থানায় মামলা দায়েরের জন্য যাচ্ছিলেন মনিরা। বিষয়টি নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ ফোনের মাধ্যমে জানায় বাংলানিউজকে। তিনি বলেন, তার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শাহিনার নেতৃত্বে একটি দল তাদের বাসায় এসেছে।
এ ঘটনার পর মনিরা বাবুসহ বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও সেখানে শাহিনার নাম দেননি। এরপর থেকে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। স্থানীয়দের দাবি, সরাসরি চাপ দেওয়ায় মনিরা তার স্বামীর হত্যা মামলায় শাহিনার নাম দেননি।
কিন্তু গত ১৬ জুন যখন বাংলানিউজ নাদিমের মেয়ে জান্নাতের সঙ্গে কথা বলে, তিনি জানিয়েছিলেন মামলা হলে সেটির প্রধান আসামি হবেন বকশীগঞ্জের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম। কারণ, তিনি মামলার জন্য হাতে লেখা কাগজের ড্রাফটে শাহিনা বেগমকেই ১ নম্বর আসামি করে অভিযোগ লিখেছিলেন।
বকশীগঞ্জবাসী বলছেন, শাহিনা বেগমের নামে সরাসরি অভিযোগ বা মামলা করতে ভয় পেয়েছেন সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। এ ব্যাপারে অবশ্য মনিরা বলছেন,
শাহিনা বেগমের নাম উঠলেই বলা হচ্ছে তাকে রাজনৈতিক কারণে যেন না জড়ায়। তা ছাড়া আমার তিনটি সন্তান আছে। আমারই তাদেরকে দেখতে হবে।
গত ১৬ জুন রাতে জামালপুরের পুলিস সুপার (এসপি) নাসির উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিক নাদিমের বাড়িতে তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল বাংলানিউজ। এসপি গণমাধ্যমের তোয়াক্কা না করেই মনিরাকে বলেন, মামলায় রাজনৈতিক কেউ থাকলে খারাপ প্রভাব পড়বে। মামলায় সরাসরি জড়িত না থাকলে চার্জশিটে নাম আসবে না।
এসপির এমন বক্তব্য ভয় ধরিয়ে দেয় মনিরার মনে। তাই সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি শাহিনাকে মামলার আসামি করছেন না। এমন অভিমত অনেকেরই।
এ ছাড়াও জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক নাদিমের শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে অনেকে মনিরাকে মার মামলায় শাহিনার নাম অন্তর্ভুক্ত না করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
জামালপুরের সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ জানিয়েছে, নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু নাদিমের মৃত্যু হলে এ চেষ্টা বৃথা যায়। তাই শুধুমাত্র বাবুকে দায়ী করে নেপথ্যে থাকা শাহিনা বেগমকে বাঁচাতে তৎপরতা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় নাদিমের পরিবারকে নানাজন নানা পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু সবার একটাই চাওয়া শাহিনার নাম যেন মামলায় না যায়।
এত কিছুর পরও শাহিনার মুখোশ খুলে দিতে চান কেউ কেউ। এরমধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ‘খলনায়িকা’ হিসেবে তারা শাহিনাকেই দেখছেন।
বকশিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন মিয়া বলেন, সাংবাদিক নাদিমকে থামাতে যতরকম কৌশল করা দরকার, তিনি সব করেছেন। কিন্তু সফল হননি। সবশেষ তারা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কাজটি করে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান বলেন, বকশিগঞ্জ শহর থেকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন অনেক দূরে। এত দূর থেকে এসে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করবে, তাও বাড়ির কাছে হত্যা করবে শেল্টার না থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয়। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহিনা বেগম শেল্টার দিয়েছে। তার শেল্টার ছাড়া এই হত্যা করার সাহস বাবু চেয়ারম্যান পাবে না।
বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফজলুর রহমান কুদু বলেন, নাদিমের হত্যাকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনার নাম বার বার আসছে। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব সত্য বের হয়ে আসবে।
এসব বিষয়ে কথা হলে হামলার পেছনে শাহিনা জড়িত রয়েছেন নাদিমের পরিবারের এমন দাবি প্রসঙ্গে এসপি নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের অপরাধ বিজ্ঞান বা আইন বলে ঢাকা থেকে হামলার অংশ হতে পারবে না এটা সত্য না। যদি নাম আসে করবো, আসামি আসলে করবো। জড়িত থাকলে বা মামলা হলে আটক করা হবে। প্রথম থেকে আমি বলেছি বাবু প্ল্যানমেকার। প্রত্যেকটা জায়গায় বলেছি। আরও মাস্টারমাইন্ড আছে তারাও বের হয়ে আসবে।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সীমা রানী সরকার বলেন, গ্রেপ্তার ১৩ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত করে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে নিজের প্রতি আসা সব দোষ অস্বীকার করেছেন শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বানোয়াট ও অপপ্রচার। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলায় ঘটনায় আমার দায় নেই। আমার কোনো কর্মী হামলা করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ষড়যন্ত্র করে একটি মহল আমাকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
চেয়ারম্যান বাবু আপনার রাজনীতি করেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসঙ্গে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার পিতা রাজাকার ছিলেন এমন সংবাদ প্রকাশে আপনি ক্ষিপ্ত ছিলেন কিনা বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহিনা বলেন, সে ঘটনা মিটে গেছে।
নাদিম হত্যা ছাড়াও একটি বিষয় বার বার উঠে আসছে শাহিনার বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীকে নিয়ে। স্থানীয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাকে রাজাকার বলছেন। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক মুন্সি বীরপ্রতীক বলেন, বকশিগঞ্জের বাবুল তালুকদারের বাবা মফিজল হক তালুকদার তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিল। শাহিনার বাবা আব্দুল কাইয়ুম মুন্সী দালাল ও পাকিস্তানিদের কেসের আসামি ছিল। মফিজল তালুকদার নিজে রাজাকার তৈরি করতো, কাইয়ুমও তাই করতো। আমরা প্রত্যক্ষ্য সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী।
আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহিনার বাবা রাজাকার ছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে গণমাধ্যম কথা বলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র এ ব্যাপারে বলেন, এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলেন রাজাকার ছিলেন, কেউ বলেন ছিলেন না।
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকিবিল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা নেই যে কোনকিছু সত্যতা যাচাই করবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হঠাৎ করেই বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আব্দুল কাইয়ুম মুন্সীর কন্যা শাহিনা বেগমকে সভাপতি ও মফিজল হক তালুকদারের ছেলে বাবুল তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কামাল আজাদের সুপারিশে।
সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেন নিহত নাদিম। যে কারণে শাহিনার নির্দেশে স্বপন ও শামীমের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়। এ তিনজনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নাদিম। সূত্র: বাংলানিউজ২৪.কম
প্যা/ভ/ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.